আত্মত্যাগ

প্রকাশিত: ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২৩

আত্মত্যাগ
নিউজটি শেয়ার করুন

 

অচিনপুর নামে ছোট্ট একটা গ্রামে বাস করতো রামু নামের সহজ সরল একটা ছেলে । সে গ্রামের যেকোনো মানুষের বিপদে সবার আগে রামু এগিয়ে আসতো। রামু সবে ২১ বছরে পা দিয়েছে। পশুপাখি ছিল তার বড্ড প্রিয়। রামুর একটা ছাগল ছিল রামু তাকে ভালোবেসে মিঠু বলে ডাকতো। রামু ক্লাস অষ্টম শ্রেণীতে পড়ালেখা করে আর পড়তে পারেনি টাকা পয়সার জন্য। এ নিয়ে রামুর মনে একটু আক্ষেপ থাকলেও দিনকাল তার ভালোই কাটছিলো । একদিন রামুর বাবা রামুকে ডেকে বলল,

 

–”অনেক তো ঘুরে বেরিয়েছিস এদিক সেদিক। আমি ঠিক করেছি পাশের বাড়ির করিম মিয়ার ছেলের সাথে তোকেও বিদেশ পাঠিয়ে দিব। কোন টাকা পয়সা লাগবে না দালাল ধরে যাবে। ওইখানে যাওয়ার পর কাজ করে আস্তে আস্তে দালালকে টাকা পরিশোধ করলেই হবে।”

 

 

রামু ও তার বাবার মুখে এ কথা শুনে কান্না করতে করতে বলল,,

 

 

– “আব্বা তুমি আমারে বিদেশ পাঠাইও না। ওইখানে যাইয়া আমি তোমাদের ছাড়া থাকতে পারমুনা। ও আম্মা আব্বারে একটু বুঝাইয়া কওনা,আমি তোমাদের ছাড়া, মিঠু ছাড়া কোথাও গিয়ে থাকতে পারমুনা। আমি না থাকলে মিঠু রে কে দেখাশোনা করবো ও তো আমারে ছাড়া কারো সাথে খায় না।”

 

 

রামুর মা মুখে আঁচল গুজে ঘরের এক কোণে বসে কান্না করছে। কারণ রামুর বাবার মুখের উপর কথা বলার কোন সাহস তার নাই। অবশেষে তাদের কথায় ঠিক হলো। আশেপাশের অনেকেই রামুর বাবাকে বুঝিয়েছে কিন্তু রামুর বাবা তাদের কোন কথাই শুনেনি।

 

 

তিনদিন পর রাত ২ টায় রামুর বাবা ফোনের শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে। ফোনটা রিসিভ করে বলল ,

 

 

– “কিরে বাজান, দুই দিন হল তোদের কোন খোঁজ খবর নাই। তোরা তো ঠিক আছিস। আমার মনটা যে বড্ডকো খু ডাকছে। আমি তোকে পাঠিয়ে কোন ভুল করিনি তো।””

 

 

– “বাবা তোমার ছেলে ভালো নেই। করিম চাচার ছেলে কে দালালরা কোথায় যেন নিয়ে গেছে। আমি ওদেরকে জিজ্ঞাসা করলে আমাকে ধরে মারধর করে। তিন দিন হয়ে গেল কিছুই খাইনি। আমাদের সবাইকে চাপ দিচ্ছে বাড়ি থেকে ফোন করে টাকা আনার জন্য। যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরকে ধরে সাগরে ফেলে দিচ্ছে। বাড়ির সবাইকে বলো আমার জন্য একটু দোয়া করতে। আমার মিটুকে দেখে রেখো। আমি যদি বেঁচে ফিরি তাহলে তোমাদের সাথে আবার দেখা হবে। এই বলে রামুর কল কেটে যায়। তারপর থেকে রামুর আর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি।”


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ